আমি তখন বেশ চোট. আমার বয়স তখন সম্ভবত ১০ হবে. আমরা থাকতাম একটা মফস্বল এলাকায়. আমাদের ঐখানে পহেলা বৈশাখ মানেই ছিল মেলা, কাঠের গাড়ি, ভাপু বাসী, মাটির খেলনা,খই মুড়ি এমন সব জিনিস. আব্বা তো পহেলা বৈশাখ হলেই আমাদের কে এসব কিনে দিতেন. কিন্তু আম্মা কখনো আমাদের মেলায় যেতে দিতে চাইতেন না. আমার খুব ইচ্ছা হত মেলায় যেতে. আমার একজন বান্ধবী ছিল রুমা নামের. আমরা ঠিক করলাম এইবার আমরা লুকিয়ে মেলায় যাব. যা ভাবা সেই কাজ. দুপুরে আম্মা ঘুমিয়ে পড়লে চুপি চুপি উঠে গেলাম আম্মা র পাশ থেকে.তারপর মুক্তি আর মুক্তি. আকাশ ভরা নিল আর মাঠ ভরা সবুজ তার মাঝে আমরা মুক্ত দুটি পাখি…দৌড়চ্ছি তো দৌড়চ্ছি. তারপর একসময় থামলাম. এখন মেলায় যাব. দুজন হাটা সুরু করলাম. বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর দুজনেই টের পেলাম রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি. ভয়ে দুই জনেই কাঠ হয়ে গেলাম…এখন কি হবে??? কাকে জিজ্ঞেস করব কিভাবে বাসায় যাব দুজনেই বুজতে পারছিলাম না. একবার ভাবছি বড় কাওকে জিজ্ঞেস করব আবার ভাবছি যদি ছেলেধরা হয়!!!! ওই বয়সে ছেলেধরার গল্প খুব ভালমতো মাথায় ঢুকে গেছিল. হাঁটছি তো হাঁটছি… এই গলি সেই গলি. গলির যেন আর শেষ নেই. রাস্তার ও আর শেষ নেই. আমাদের সহর থেকে একটু বাইরে একটা ভাঙ্গা পুরাতন রাজবাড়ি ছিল আর ছিল একটা পুকুর. পুকুরের পানি কোনো কারণে ছিল ভীষণ রকমের লাল. কথিত ছিল রাজা খুব অত্যাচারী ছিল. মানুষ মেরে মেরে ওই পুকুরে দাবিয়ে রাখত তাই সব মানুষের রক্তে পুকুরের পানি লাল হয়ে গেছে. ওই পুকুর এ কেও গোসল ও করত না ভয়ে. আমরা কিভাবে কিভাবে যেন ঐখানে চলে গেছিলাম আর তখনি আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল. আর কোনো উপায় না দেখে দুজন রাজবাড়ির দিকে দিলাম ছুট. চারপাশ অন্ধকার করে মুসুলধারে বৃষ্টি পরকে আর আমরা রাজার বাগানবাড়ির একটা পাথরের পরীর নিচে বসে আছি. দুজনেই ভিজে যাচ্ছিলাম. বৃষ্টি আর থামে না. ভয়ে দুজনের মুখ ই শুখনো. পহেলা বৈশাখে আমাদের মেলা দেখা মাথায় উঠেছে. রুমা ছিল আমার চেয়েও বেশি ভিতু. হটাত ই ও কান্না সুরু করে দিল. আমি যদিও ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু ওকে বুজতে দিলাম না. ওকে আমি সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম. আমার খুব রাগ লাগছিল ওর উপর. একসময় রেগে বলে ফেললাম তুই থাম নইলে আমি কিনত চলে যাব. তারপর কান্নার বেগ একটু কমল কিন্তু পুরাপুরি থামল না. যাই হোক বৃষ্টি একটু কমলে দুজনে হাটা সুরু করলাম. তখন অন্ধকার পুরাপুরি কাটেনি. কিসের সাথে যেন আমার পা বেজে আমি উপর হয়ে পরে গেলাম. তাকিয়ে দেখি একটা মানুষ. কি যে ভই পেলাম ২ জন!!!!! রুমা তো ভই এ কাঁপছিল. আমি উঠে দৌড় দিচ্ছিলাম দেখি রুমা নড়তে পারছে না. আমি আবার ফিরে গেলাম. কি করব কিছু বুজছিনা. হটাত দেখি লোক টা নড়ছে. অনেক ভয় পেলে মানুষের ভয় ভেঙ্গে যায়. আমারও গেল. আমি কাছে গেলাম. আমার জামা দিয়ে লোকটার মাথা মুছার চেষ্টা করলাম. লোকটা চোখ খুলে আমাদের দেখল. তারপর আমাকে ধরে উঠে গিয়ে দেয়ালে গা এলিয়ে বসলো. একটু পর সে কথা বলার সক্তি খুঁজে পেল মনে হয়.সে বলল তার একটা মেয়ে ছিল আমাদের সমান. যেই মেয়েটা এক পহেলা বৈশাখে এদিকে খেলতে এসে পুকুরে ডুবে মারা যায়. তারপর থেকে প্রতি নববর্ষে সে এইখানে আসে. আজ ও এসেছিল কিন্তু যাবার সময় হটাত ই মাথা ঘুরে পরে গেছিল. যাবার সময় আমরা থাকে খেয়াল করিনি. যাই হোক উনার সাথে আমাদের খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেল. উনি ই পরে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিলেন. বাসায় গিয়ে দেখি ভয়ঙ্কর অবস্থা. আমাদের খোজ পরে গেছে. ভাই বের হচ্ছে থানাতে রিপোর্ট করবার জন্য. আম্মা আর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে.রুমার আম্মা কান্না কাটি করছে. তারপর আর নাইবা বললাম. শুধু বলি দুজনের পিঠেই কিছু পরেছিল.আজ রুমা কানাডা তে থাকে. আমি একটা multinational এ চাকরি করছি. বন্ধুত্ব এখনো শেষ হইনি. অনেক পহেলা বৈশাখ আসলেও ওই বৈশাখ আমি ভুলতে পারব না. আজমান চাচার আর কোনো সন্তান হইনি. আমাদের কে উনি সন্তানের মতই ভালবাসেন, চাচি ও তাই. ওই পহেলা বৈশাখে আজমান চাচা কে পেয়েছিলাম এটাই বড় প্রাপ্তি.
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হাসান নিরো
গল্প বলার ঢং অনেক ভালো কিন্তু গল্পটা ঠিক গল্প হয় নি। প্রথম আলোর ছুটির দিনের ঘর-মন-জানালা বা ব্লগ টাইপের হয়ে গেছে। তবে গল্প লেখার হাত ভালই।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।